বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০১৪

সার্ভাইভ জানুন-৩

“পানি”
পানির অপর নাম জীবন। জীবনের চলার প্রতিটি মুর্হুতে পানি ছাড়া আমরা বাঁচতে পারবো না। প্রতিদিনি একজন মানুষকে নজিরে শরীরকে হাইড্রেড রাখতে এবং খাবার ভালোভাবে হজম করতে প্রায় চার লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু আপনি যখন জঙ্গলে থাকবেন তখন আপনাকে প্রতি ঘন্টায় প্রায় দুই লিটার পরিমান পানি পান করার প্রয়োজন হবে। এর কারন প্রথমতো, প্রায় সব জঙ্গলেই আদ্রতার পরিমান বেশি থাকায় শরীর খুব তাড়াতাড়ি ডি-হাইড্রেড হয় আর দ্বিতীয়ত, জঙ্গলে টিকে থাকার জন্য যথষ্টে পরিমান পরিশ্রম করতে হয় আর এর কারনে শরীর থেকে ঘামরে সাথে প্রচুর পরিমানে পানি বরে হয়ে যায় ফলে আপনি ডি-হাইড্রেড হয়ে পরবেন । সার্ভাইভাল এক্সপার্টদের মতে জঙ্গলে খাবার ছাড়া চৌদ্দ দিন পর্যন্ত বাঁচা যায় কিন্তু পানি ছাড়া এক সপ্তাহও বাঁচা সম্ভব নয়। এ কারনে আপনার সাথে থাকা পানির মজুদ যদি শষে হয়ে যায় তবে কি করে এবং কোথায় পানি পাওয়া যাবে এবং কি করে তা বিশুদ্ধ করা যাবে তা আপনার জানা একান্ত প্রয়োজন। নিচে আমি কিছু উদাহরন দিচ্ছি।
১) প্রত্যেক রেইনফরেস্টে কম বেশি বৃষ্টিপাত হয়। যদি পানির মজুদ শেষ হয়ে যায় তবে চেষ্টা করুন বৃষ্টির পানি ধরতে। এ পানি নির্দ্বিধায় পান করা যায়।
২) চলার পথে গাছের পাতায়, গাছের খোড়ল, মাটিতে গর্তে বৃষ্টির জমা পানির খোঁজ করুন। এতে সামান্য হলেও আপনার পানির চাহিদা পুরন হবে।
৩) বেশি দিন আগের জমা পানি, নদীর পানি এমন কি ঝরনার পানিও বিশুদ্ধ না করে খাওয়া উচিৎ নয়। এ ধরনরে পানি দেখতে পরিষ্কার হলেও তাতে থাকা জীবাণু ও প্যারাসাইড আপনাকে অসুস্থ করে তুলব। যার থেকে আপনার ডায়রিয়া ও পরে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
৪) পানি বিশুদ্ধ করতে আগুন জ্বালিয়ে পানি ফুটিয়ে নিন। এতে পানির সমস্ত ক্ষতিকর জীবাণু আর প্যারাসাইড মারা যাবে। এ ছারাও আপনার সাথে যদি “পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট” থাকে তবে তা অল্প পরিমানে পানিতে মিশিয়ে পানি বিশুদ্ধ করে তা পান যোগ্য করে নিতে পারেন।
৫) পানি তৈরী করার জন্য “সোলার স্টিম শিল্ড” পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আপনার একটুকরো পলিথিন, কয়েকটি পাথর ও এক টুকরো কাপড়ের প্রয়োজন হবে। যে জায়গায় রোদ বেশি পরে সে রকম একটি জায়গা বাছাই করুন এবং একটি গর্ত তৈরী করুন। এবার গর্তে কয়েক টুকরো পাথর ও একটুকরো কাপড় রেখে গর্তের মুখটি পলিথিন দিয়ে ভালো ভাবে বন্ধ করে দিন। এতে করে সূর্যের আলো গর্তে আটকে গিয়ে ভেতরে আদ্রতা তৈরী করবে। এ আদ্রতা পাথরের সংস্পর্শে এসে ঠান্ডা হয়ে জলীয় বাষ্প আকারে ফোঁটায় ফোঁটায় কাপড়ে জমা হবে। ব্যপারটা সময় সাপেক্ষ তবে এতে করে দিন শেষে সামান্য পানি আপনি পেতে পারেন। হয়তো বা সেটা কয়েক ফোঁটা হবে কিন্তু সেটাই আপনার মনের জোর অনেক টুকুই বাড়িয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ঠ।
৬) যে জায়গায় সবুজ গাছ পালা থাকবে বুঝবেন সেখানেই মাটিতে পানি আছে।সামনে যদি পানির কোন উৎস না থাকে তবে একটা স্যাঁতসেঁতে নরম জায়গা বেছে নিয়ে সেখানে খুড়তে থাকুন। খানিক পর দেখবেন পানি বেড় হয়ে আসছে আর পানির বদলে যদি ভেজা মাটি উঠে আসে তাতেও হতাস হবেন না। আপনি ভেজা মাটি আপনার মোজায় অথবা জামায় নিয়ে নিংড়ে নিন। দেখবেন কাপড়ের উপর দিয়ে পানি বেড় হয়ে আসছে। এ পানি সহজেই পান করা যায়।
৭) পাহাড়ের ফাটল দিয়ে অনকে সময় পানি চুইয়ে পড়তে দেখা যায়। এ পানি আপনি খেতে পারেন। এ পানির উৎস হচ্ছে পাহাড়ের ভেতরে থাকা গুপ্ত ঝরনা। পাহাড়ের ফাটল দিয়ে বেড় হওয়ার আগে এটা কয়েক দফায় ফিল্টার হয়ে নেয় তাই এটা ফোটানোর দরকার হয়না যদি না এর আশেপাশে ময়লা আবর্জনা অথবা মৃত জন্তু জানোয়ার পরে না থাকে।
৮) বাঁশ গাছ জঙ্গলে পানির ভালো উৎস। প্রকৃতি গত ভাবেই এর ভেতরে পানির মজুদ থাকে তাই চলার পথে যদি বাঁশ ঝাড় পরে তবে ছুরি দিয়ে এর দুই গিঁটের মাঝখানের ফাঁকা অংশে কাটলেই এর ভেতর থেকে পানি বেড় হয়ে আসবে। এটা পরিষ্কার আর বিশুদ্ধ তাই সহজেই পান করা যায়।
৯) কলা গাছও জঙ্গলে পানির ভালো উৎস হিসাবে কাজ করে। কলা গাছ খোলের ভেতরে পানি মজুদ করে রাখে। একটু গভীর করে কেটে তাতে একটা নল বসিয়ে দিন। দেখবেন নল দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি বেড় হয়ে আসছে। তবে এ পানির স্বাদ একটু খট খেটে আর কষ্টে হলেও তা পান যোগ্য। তা ছারা আপনি কলা গাছের খোল নিংড়েও পানি পেতে পারেন।
১০) যদি কোন ভাবেই পানি বিশুদ্ধ করতে না পারেন তবে একটা নলে কিছু কাঠকয়লা বা সিগারেটের ফিল্টার অথবা ঘাস ঢুকিয়ে তা দিয়ে “স্ট্র” এর মত করে পানি পান করুন। এতে নলের ভেতরে থাকা জিনিস গুলো ফিল্টারের মত কাজ করে পানিতে থাকা জীবাণুর পরিমান কমিয়ে দেবে।
১১) মুখে সামান্য পানি নিয়ে হাঁটলে তা আপনাকে ঠান্ডা রাখবে আর আপনাকে পানিও কম খেতে হবে। এ ভাবে চেষ্টা করলে অল্প পানি নিয়েই অনেকটা পথ হাঁটা যায়।
১২) অনকে সময় কঠিন পরিস্থিতিতে খারাপ পানিই একটু অন্য ভাবে শরীরে প্রবেশ করাতে হয় শরীরকে হাইড্রেড রাখার জন্য। সেটি হচ্ছে আপনার পায়ু পথ দিয়ে। এখান দিয়ে খাবার অযোগ্য পানি শরীরে প্রবেশ করানো হয় শরীরকে হাইড্রেড রাখার জন্য। যেহেতু আমাদের দেহের সকল আর্বজনা আমাদের পায়ুপথ দিয়ে বেড় হয়ে যায় তাই অল্প পরিমান খারাপ পানি এখান দিয়ে প্রবেশ করালে তাতে শরীরের ক্ষতি হয় না। তবে মনে রাখতে হবে যে শুধু চরম পরিস্থিতিতেই এটা করা ভালো।
১৩) আপনি পানি হিসাবে আপনার সদ্য ত্যাগ করা “ইউরিন” ব্যবহার করতে পারনে। তবে মনে রাখবেন এতে লবন বেশি পরমিানে থাকে তাই আপনি ডি-হাইড্রেড হয়ে পরতে পারেন। চরম পরিস্থিতিতে পানির বিকল্প হিসাবে “ইউরিন ব্যবহার করা হয়।
১৪) সমুদ্রের পানি নোনা বলে তা পানের যোগ্য নয়। তবে একটু চেষ্টা করলেই তা পান যোগ্য করে তোলা সম্ভব। একটা টিনের পাত্রে নোনা পানি ভরে পাত্রটি ভালো ভাবে বন্ধ করুন। এবার পাত্রে সামান্য একটা ফুটো করে তাতে একটা নল বসিয়ে পাত্রটি আগুনের উপর বসান। যেহেতু মিষ্টি পানি লবন পানির চেয়ে হালকা তাই তা বাষ্পাকারে নলের ভেতর দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় বেড় হয়ে আসবে। এ পদ্ধতিতে একটু সময় বেশি খরচ হলেও পুরস্কার হিসাবে আপনি পাবেন পান যোগ্য মিষ্টি খাবার পানি।
১৫) সামনে নারকেল গাছ পরলে আপনি এর পানি দিয়ে অনায়াসে অনেক দিন টিকে থাকতে পারবেন। আর নারকেলের পানিতে মিনারেল বেশি থাকে যা আপনার শরীরের জন্য উপকারী।
১৬) অনেক সময় ক্যাকটাসের রস পানি হিসাবে পান করা যায়। তবে এ সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। যদি আপনি ক্যাকটাস না চিনে থাকেন তবে তা থেকে দূরে থাকবেন। অনকে সময় ক্যাকটাসের মত দেখতে “ইউফবিয়া” নামক এক ধরনের গাছ জন্মায়। এর সাদা রস খুবই বিষাক্ত। তা পান করলে আপনি মারা যেতে পারেন এমন কি মরা ইউফোবিয়াও আগুনে পোড়ালে তার বিষ ধোয়ার সাথে বাতাসে মিশে আপনার প্রান নিতে পারে।
১৭) শীতের দিনে ঘাসে প্রচুর শিশির দেখা যায়। আপনি পায়ের সাথে একটা কাপড় বা রুমাল বেঁধে তার বেতর দিয়ে হাঁটলে অনায়াসেই কাপড়ে শিশির ধরা পরবে। আপনি কাপড় নিংড়ে এ শিশির সহজেই পান করতে পারেন।
(চলবে)

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন