বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০১৪

সার্ভাইভ জানুন- ৪

আগুনঃ মানব সভ্যতার ইতিহাসের সবচাইতে বড় প্রেক্ষাপট ছিলো আগুন আবিষ্কার। আগুনের আবিষ্কার মানুষের জীবনে অনেক প্রভাব বিস্তার করে। তাই আজ যদি আগুন আবিষ্কার না হত তবে আমাদের মানব সভ্যতা হয়তো এখনো সেই আদিম অবস্থাতেই থাকতো।আগুনের আলো দূর করেছে রাতের ঘন অন্ধকার, দূরে সরিয়ে রেখেছে হিংস্র জন্তুদের। তাছাড়া কাঁচা খাবার কে আগুনে পুরিয়ে বা রান্না করে খেতে শিখেছি আমরা আগুনের কারনেই। যাইহোক, সারা পৃথিবীতে আগুন জ্বালানোকে সার্ভাইভালের সর্ব প্রধান কাজ হিসাবে গন্য করা হয়। কারন আগুন না থাকলে সার্ভাইভ করাটা নিতান্তই খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আপনি যেখানেই কেম্প করুন না কেন আগুন না থাকলে আপনাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। আপনাকে কাঁচা খাবার খেতে হবে। আপনি খাওয়ার জন্য পানি ফুটাতে পারবেন না। তাছারা আগুন জ্বালাতে না পারলে রাতে আপনাকে অন্ধকারে থাকতে হবে যার ফলে আপনি হিংস্র জন্তুর দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। তাছারা আপনি যেখানেই থাকুন আর যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন আগুন আপনাকে সবসময় সাহস যোগাবে দুরন্ত প্রকৃতিতে টিকে থাকতে। তবে এখন আগুন জ্বালানোটা অনেক সহজ হয়েগেছে। আগুন জ্বালানো জন্য এখন আমাদের আর পাথরে ঠুকাঠুকি করতে হয়না। আজকাল বাজারে আগুন ঝ্বালানোর জন্য এমন জিনিস পাওয়া যায় যা পানিতে ভিজলেও কাজ করে। এগুলোর কয়েকটা আমি ছবি সমেত বর্ননা দিতে চেষ্টা করছি । আশা করি এগুলো আপনাদের ব্যবহারিক জীবনে কাজে আসবে।
দেয়াশলাইঃ
এটি আমাদের সকলেরই খুব চেনা একটি বস্তু। প্রতিদিনই এটি ব্যবহার করে থাকি আমরা। দেয়াশলাই বা মেছকাঠি দিয়ে আমরা খুব সহজেই আগুন জ্বালতে পারি। তবে কেম্পিং এর জন্য আজকাল বিষেশ এক ধরনের দেয়াশলাই পাওয়া যায় যেগুলো পানিতে ভিজলে অথবা অতিরিক্ত ঠান্ডায় এর বিষেশ কোন ক্ষতি হয় না।
ফয়ার স্টারটারঃ
এটি একটি অত্যাশ্চার্য বস্তু যা দিয়ে খুব সহজেই যে কোন পরিবেশে যে কোন অবস্থায়আগুন জ্বালানো যায়।ফায়ার স্টারটার এর সাথে একটি স্টিলের পাত থাকে এটিকে স্ক্রেচার বলে। এই স্ক্রেচার দিয়ে ফায়ার স্টারটার এ ঘসলে আগুনের ফুলকি তৈরী করে যা থেকে আগুন জ্বালানো সম্ভব হয়। আগুনের ফুলকি শুনে হতাস হবেন না
কারন এটি লাইটারের পাথরের ফুলকির মত নয়। ফায়ার স্টারটার এ উৎপন্য প্রতিটা ফুলকির তাপমাত্রা প্রায় তিনহাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস সুতরাং আর একবার ভাবুন। ফায়ার স্টারটার পানিতে ভিজলেও সমস্যা হয় না আর আকারে ছোট বলে খুব সহজেই বহন করা যায়। আপনি চাইলে ফায়ার স্টারটারকে লকেটের মত গলায়ও ঝুলিয়ে রাখতে পারেন।
ম্যাগনেশিয়াম বারঃ

ম্যাগনেশিয়াম বারও অনেকটা ফায়ার স্টারটারের মত কাজ করে তবে এটি আকারে আর একটু বড়, কাজের পদ্ধতিও একটু ভিন্ন। এটা দিয়ে আগুন জ্বালাতে গেলে প্রথমে আপনাকে একটি স্ক্রেচার দিয়ে বার থেকে ম্যাগনেশিয়াম গুঁড়ো জ্বালানীর উপর রাখতে হবে এবং অন্য একটি স্ক্রেচার দিয়ে বারের আরেক প্রান্তে বসানো চিকন একটি লোহার পাতে ঘসে আগুনের ফুলকি তৈরী করে সেই ম্যাগনেশিয়াম গুড়োতে আগুন লাগাতে হবে। কাজটা ফায়ার স্টারটার
এর তুলনায় একটু জটিল হলেও অনেকে এটা ব্যবহার করে থাকে কারন আমাদের সকলেরই জানা আছে যে ম্যাগনেশিয়াম খুবই দাহ্য পদার্থ। তবে এটা আসলে পছন্দের বেপার আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কোন একটা ব্যবহার করতে পারেন।
গ্লীসারিন ও পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিশ্রনঃ
গ্লিসারিন ও পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এ দুইটি জিনিস আমাদের সবারই খুব পরিচিত। প্রায় সময়ই আমরা কাটা-ছরা ও পানি জীবাণু মুক্ত কাজে আরো পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট বা পটাশ আমরা ব্যবহার করে থাকি আর বিশেষ করে শীতে আমাদের ত্বককে কোমল রাখতে আমরা গ্লিসারিন ব্যবহার করি। কিন্তু এ দুটই হলো দাহ্য পদার্থ। আমরা যদি গ্লিসারিন ও পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট কে একত্রে মেশাই তবে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আগুন তৈরী হবে। এর জন্য আপনাকে শুধু পদার্থ দুটি সমান সমান ভাবে মিশাতে হবে। এথেকে যে তাপ তৈরী হবে তাতে আপনি ভেজা বা সেঁত সেঁতে জ্বালানিতেও আগুন জ্বালতে পারবেন।

ফায়ার স্পিন্ডেলঃ

আদী যুগে এমনকি এখনও পৃথিবীর অনেক প্রত্যন্ত জায়গায় আদিবাসীরা এ পদ্ধতিতে আগুন জ্বালিয়ে থাকে। তবে এখন আর্মি, স্কাউট এবং সার্ভাইভাল এক্সপার্টরাও এ পদ্ধতিতে আগুন জ্বালিয়ে থাকেন। একটা কথা জানা প্রয়োজন যে এ উপায়ে আগুন জ্বালানোটা খুবই কঠিন কারন যেহেতু ঘর্সন প্রকৃয়ায় আগুন তৈরী হবে তার জন্য আপনাকে প্রচুর শক্তি ক্ষয় করতে হবে এবং দৃড় মানসিকতার অধিকারী হতে হবে। এটি হলো সর্বশেষ উপায়, যখন আগুন জ্বালানোর মত আপনার আর কিছু থাকবেনা। আপনাকে অনেক দিনের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে এর জন্য। যাই হোক, আপনাকে মনে রাখতে হবে যে এ উপায়ে শুধূ এক টুকরো জ্বলন্ত কয়লা তৈরী হবে তাই আপনাকে প্রথমেই কিছু তুলো অথবা নারকেলের ছোবড়া ছাড়িয়ে পাখির বাসার মত বানিয়ে নিতে হবে যাতে জ্বলন্ত কয়লা খুব সহজেই একটি বড় আগুন তৈরী করতে পারে। প্রথমেই আপনি একটি কাঠ নিন এবং এতে ছুরি দিয়ে একটি ছিদ্র করুন, এরপর আপনি একটি একহাত লম্বা সোজা ও মসৃন ডাল নিন। আপনি একটি ধনুক তৈরী করুন এবং কাঠিতে সংযোজন করুন।
কাঠের গর্তে সামান্য পরিমান কাঠের গুরো দিন ও ধনুক সমেত ডালটি গর্তে স্থাপন করুন। এবার ছোট আরেকটুরো কাঠ বা বোতলের ছিপি বা শক্ত কাপড় আপনার বাঁহাতে নিয়ে ডালটির অন্য প্রান্তে চেপে ধরুন এবং ডানহাত দিয়ে ধনুকটি ধরে সামনে-পেছনে ড্রিল মেশিনের মত চালনা করতে থাকুন। এতে একসময় ঘর্ষনের ফলে কাঠটি গরম হয়ে

প্রথমে ধোঁয়া এবং তার পর জ্বলন্ত কয়লা তৈরী হবে। তবে একটা বিষয়ে সাবধান থাকবেন আপনার কপাল বা নাক থেকে ঘাম যেন গড়িয়ে না পরে তাতে আপনার সমস্ত পরিশ্রম ব্যর্থ হতে পারে কারন আমি আগেই বলেছি যে কাজটি খুবই সময় সাপেক্ষ। তবে ফায়ার স্পিন্ডেলে আগুন জ্বালানোর জন্য আপনার মনোবল এবং শারীরিক শক্তি দুটোরি সমান প্রয়োজন কারন ফায়ার স্পিন্ডেল দিয়ে আগুন জ্বালাতে গেলে আপনাকে স্পিন্ডেল বা লম্বা ডালটি ততক্ষন ঘোরাতে হবে যতক্ষন না জ্বলন্ত কয়লা বের হয়। অনেকে আবার ফায়ার স্পিন্ডেলে ধনুক ব্যবহার না করে হাত দিয়ে ঘুরিয়েও আগুন তৈরী করে। কিন্তু আর জন্য আপনার হাতের তালা বা চেটো অসম্ভব রকম শক্ত হতে হবে তা না হলে ফোসকা পরে যাবে। তবে যাই হোক আপনি ফায়ার স্পিন্ডেল যে ভাবেই ব্যবহার করেন না কেন একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন ফায়ার স্পিন্ডেলে আগুন জ্বলতে গেলে আপনাকে ইস্পাত কঠিন স্নায়ুর অধিকারী হতে হবে কারন ফায়ার স্পিন্ডেলে একটুকরো কয়লা তৈরী করতে গেলে কম করে হলেও দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লেগে যায় তবুও যদি আপনি একটানা না থেমে স্পিন্ডেল ঘরিয়ে যান। আপনি বারবার হেরে যাবেন ক্লান্তির শেষ সীমায় পৌঁছে যাবেন তবুও আপনাকে চেষ্টা করে যেতেই হবে। বাসায় নিয়মিত চর্চা করলে এক সময় ব্যপার গুলো সহজ হয়ে যায়। আগুন সংক্রান্ত খুঁটিনাটিঃ
১. চারক্লোথঃ চারক্লোথ দিয়ে খুব সহজেই আগুন জ্বালানো যেতে পারে। এটি তৈরী করতে প্রথমে একটুকরো সুতির কাপড় ও একটি ছোট টিনের কৌটা নিন। টিনের কৌটায় ছোট একটু ছিদ্র করুন ও কৌটাতে কাপড়ের টুকরোটি ভরে মুখ বন্ধ করে কৌটাটি আগুনে দিন। কিছুক্ষন পর কৌটাটি গরম হয়ে ভেতরের কাপড় থেকে সমস্ত আদ্রতা বাস্পাকারে কৌটার ফুঁটো দিয়ে বেড় হয়ে আসবে। সমস্ত আদ্রতা বেড় হয়ে যাবার পড় কৌটাটি খুললে দেখা যাবে ভেতরের কাপড়টি কালো হয়ে গেছে। এটিই চারক্লোথ। চারক্লোথ খুবই দাহ্য পদার্থ তাই এটি সামান্য আগুনের ফুলকিতেও জ্বলে উঠে। তাই সাথে চারক্লোথ থাকলে তা দিয়ে সহজেই আপনি আগুন জ্বলতে পারবেন।
২. ফায়ার পিষ্টনঃ ফায়ার পিষ্টনে বাতাসের ঘর্ষন কে কাজে লাগিয়ে আগুন তৈরী করা হয়। এর জন্য আপনাকে দুই মাথা বন্ধ দুই টুকরো পাইপ সংগ্রহ করতে হবে। পাইপের টুকরো দুটি হতে হবে এন্টেনার মত যাতে একটি অপরটির মদ্ধে খুব সহজেই আশা যাওয়া করতে পারে। এবার আপনি পাইপের এক টুকরোর খোলা মুখে সামান্য কয়লা বা শুকনো কাঠের ছোট টুকরো ভরে দিয়ে পাইপের টুকরোটি অপর টুকরোর সাথে যুক্ত করে ইট বা পাথরের টুকরো দিয়ে জোড়ে কয়েকবার ঝটকা দিন। ঝটকার ফলে ফাইপ দুটো সাইকেলের পাম্পারের মত কাজ করবে এবং পাইপ দুটো দুই মাথা আটকানো থাকার ফলে ভেতরের বাতাস একমাথা থেকে অপর মাথায় ঘর্ষন জনিত কারনে গরম হয়ে ভেতরের জ্বালানীতে আগুন তৈরী করবে।
৩. মোবাইলের ব্যাটারীর সাহায্যেঃ আপনার সাথে যদি মোবাইল থাকে তবে তা দিয়েও আগুন জ্বালানো যেতে পারে। এখনকার মোবাইলের ব্যাটারী গুলোর মধ্য একপ্রকারের এসিড থাকে। আপনি একটি ছুড়ি নিন ও বেটারীটি একটু ফুটো করুন। এবার ছুড়ি দিয়ে বেটারীর (+/-) কে এক করে স্পার্ক তৈরী করুন দেখবেন স্পার্ক টি লিকুইডে লেগে আগুন তৈরী করবে। আপনি একই ভাবে (+/-) ব্যবহার করে গাড়ীর বেটারী থেকেও আগুন জ্বালতে পারবেন।
৪. ক্যামেরার লেন্স অথবা আতস কাঁচ ব্যবহার করেঃ ক্যামেরার লেন্স অথবা আতস কাঁচ ব্যবহার করে সূর্যের আলোকে ব্যবহার করেও আগুন জ্বালতে পারবেন।
৫.পেট্রোলিয়াম জেলীঃ শরীর কে কোমল রাখার জন্য আমরা যে পেট্রোলিয়াম জেলী ব্যবহার করি তা ও এক ধরনের দাহ্য পদার্থ। এটিকে তুলোয় বা কাপড়ে মাখিয়ে নিলে ভাল একটি জ্বালানির উৎস পাওয়া যায়। কারন এ দিয়ে চট্ করে আগুন জ্বালানো যায়।
সতর্কতাঃ আপনি যা দিয়েই আগুন জ্বালান না কেন আপনাকে প্রথমেই ভালো জ্বালানী সংগ্রহ করতে হবে ও তা হাতের কাছে রাখতে হবে কারন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আপনি সামান্য জ্বলন্ত কয়লা তৈরী করবেন যা থেকে পরে আপনাকে বড় আগুন তৈরী করতে হবে।তাই জ্বালানী ভালো ভাবে তৈরী করে না রাখলে আপনার সমস্ত পরিশ্রম নষ্ট হতে পারে।
আপনাকে এমন জ্বালানী সংগ্রহ করতে হবে যেটা সামান্য জ্বলন্ত কয়লাতেও খুব সহজেই জ্বলে উঠে। যেমন, নারকেলের ছোবড়া, দড়ি কিংবা পাখির বাসা দিয়ে আগুন জ্বালাতে চান তবে প্রথমেই এ গুলোকে দুহাতে জোড় ঘসে নরম ও ঝুরঝুরে করে নিতে হবে এর ফলে আপনি যখন এতে কয়লার জ্বলন্ত টুকরো দিবেন তখন সেটি জ্বলানীতে রেখে সামান্য ফুঁ দিলে তা সহজেই জ্বলে উঠবে।
(চলবে)

 
 
 

 
 

সার্ভাইভ জানুন-৩

“পানি”
পানির অপর নাম জীবন। জীবনের চলার প্রতিটি মুর্হুতে পানি ছাড়া আমরা বাঁচতে পারবো না। প্রতিদিনি একজন মানুষকে নজিরে শরীরকে হাইড্রেড রাখতে এবং খাবার ভালোভাবে হজম করতে প্রায় চার লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু আপনি যখন জঙ্গলে থাকবেন তখন আপনাকে প্রতি ঘন্টায় প্রায় দুই লিটার পরিমান পানি পান করার প্রয়োজন হবে। এর কারন প্রথমতো, প্রায় সব জঙ্গলেই আদ্রতার পরিমান বেশি থাকায় শরীর খুব তাড়াতাড়ি ডি-হাইড্রেড হয় আর দ্বিতীয়ত, জঙ্গলে টিকে থাকার জন্য যথষ্টে পরিমান পরিশ্রম করতে হয় আর এর কারনে শরীর থেকে ঘামরে সাথে প্রচুর পরিমানে পানি বরে হয়ে যায় ফলে আপনি ডি-হাইড্রেড হয়ে পরবেন । সার্ভাইভাল এক্সপার্টদের মতে জঙ্গলে খাবার ছাড়া চৌদ্দ দিন পর্যন্ত বাঁচা যায় কিন্তু পানি ছাড়া এক সপ্তাহও বাঁচা সম্ভব নয়। এ কারনে আপনার সাথে থাকা পানির মজুদ যদি শষে হয়ে যায় তবে কি করে এবং কোথায় পানি পাওয়া যাবে এবং কি করে তা বিশুদ্ধ করা যাবে তা আপনার জানা একান্ত প্রয়োজন। নিচে আমি কিছু উদাহরন দিচ্ছি।
১) প্রত্যেক রেইনফরেস্টে কম বেশি বৃষ্টিপাত হয়। যদি পানির মজুদ শেষ হয়ে যায় তবে চেষ্টা করুন বৃষ্টির পানি ধরতে। এ পানি নির্দ্বিধায় পান করা যায়।
২) চলার পথে গাছের পাতায়, গাছের খোড়ল, মাটিতে গর্তে বৃষ্টির জমা পানির খোঁজ করুন। এতে সামান্য হলেও আপনার পানির চাহিদা পুরন হবে।
৩) বেশি দিন আগের জমা পানি, নদীর পানি এমন কি ঝরনার পানিও বিশুদ্ধ না করে খাওয়া উচিৎ নয়। এ ধরনরে পানি দেখতে পরিষ্কার হলেও তাতে থাকা জীবাণু ও প্যারাসাইড আপনাকে অসুস্থ করে তুলব। যার থেকে আপনার ডায়রিয়া ও পরে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
৪) পানি বিশুদ্ধ করতে আগুন জ্বালিয়ে পানি ফুটিয়ে নিন। এতে পানির সমস্ত ক্ষতিকর জীবাণু আর প্যারাসাইড মারা যাবে। এ ছারাও আপনার সাথে যদি “পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট” থাকে তবে তা অল্প পরিমানে পানিতে মিশিয়ে পানি বিশুদ্ধ করে তা পান যোগ্য করে নিতে পারেন।
৫) পানি তৈরী করার জন্য “সোলার স্টিম শিল্ড” পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আপনার একটুকরো পলিথিন, কয়েকটি পাথর ও এক টুকরো কাপড়ের প্রয়োজন হবে। যে জায়গায় রোদ বেশি পরে সে রকম একটি জায়গা বাছাই করুন এবং একটি গর্ত তৈরী করুন। এবার গর্তে কয়েক টুকরো পাথর ও একটুকরো কাপড় রেখে গর্তের মুখটি পলিথিন দিয়ে ভালো ভাবে বন্ধ করে দিন। এতে করে সূর্যের আলো গর্তে আটকে গিয়ে ভেতরে আদ্রতা তৈরী করবে। এ আদ্রতা পাথরের সংস্পর্শে এসে ঠান্ডা হয়ে জলীয় বাষ্প আকারে ফোঁটায় ফোঁটায় কাপড়ে জমা হবে। ব্যপারটা সময় সাপেক্ষ তবে এতে করে দিন শেষে সামান্য পানি আপনি পেতে পারেন। হয়তো বা সেটা কয়েক ফোঁটা হবে কিন্তু সেটাই আপনার মনের জোর অনেক টুকুই বাড়িয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ঠ।
৬) যে জায়গায় সবুজ গাছ পালা থাকবে বুঝবেন সেখানেই মাটিতে পানি আছে।সামনে যদি পানির কোন উৎস না থাকে তবে একটা স্যাঁতসেঁতে নরম জায়গা বেছে নিয়ে সেখানে খুড়তে থাকুন। খানিক পর দেখবেন পানি বেড় হয়ে আসছে আর পানির বদলে যদি ভেজা মাটি উঠে আসে তাতেও হতাস হবেন না। আপনি ভেজা মাটি আপনার মোজায় অথবা জামায় নিয়ে নিংড়ে নিন। দেখবেন কাপড়ের উপর দিয়ে পানি বেড় হয়ে আসছে। এ পানি সহজেই পান করা যায়।
৭) পাহাড়ের ফাটল দিয়ে অনকে সময় পানি চুইয়ে পড়তে দেখা যায়। এ পানি আপনি খেতে পারেন। এ পানির উৎস হচ্ছে পাহাড়ের ভেতরে থাকা গুপ্ত ঝরনা। পাহাড়ের ফাটল দিয়ে বেড় হওয়ার আগে এটা কয়েক দফায় ফিল্টার হয়ে নেয় তাই এটা ফোটানোর দরকার হয়না যদি না এর আশেপাশে ময়লা আবর্জনা অথবা মৃত জন্তু জানোয়ার পরে না থাকে।
৮) বাঁশ গাছ জঙ্গলে পানির ভালো উৎস। প্রকৃতি গত ভাবেই এর ভেতরে পানির মজুদ থাকে তাই চলার পথে যদি বাঁশ ঝাড় পরে তবে ছুরি দিয়ে এর দুই গিঁটের মাঝখানের ফাঁকা অংশে কাটলেই এর ভেতর থেকে পানি বেড় হয়ে আসবে। এটা পরিষ্কার আর বিশুদ্ধ তাই সহজেই পান করা যায়।
৯) কলা গাছও জঙ্গলে পানির ভালো উৎস হিসাবে কাজ করে। কলা গাছ খোলের ভেতরে পানি মজুদ করে রাখে। একটু গভীর করে কেটে তাতে একটা নল বসিয়ে দিন। দেখবেন নল দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি বেড় হয়ে আসছে। তবে এ পানির স্বাদ একটু খট খেটে আর কষ্টে হলেও তা পান যোগ্য। তা ছারা আপনি কলা গাছের খোল নিংড়েও পানি পেতে পারেন।
১০) যদি কোন ভাবেই পানি বিশুদ্ধ করতে না পারেন তবে একটা নলে কিছু কাঠকয়লা বা সিগারেটের ফিল্টার অথবা ঘাস ঢুকিয়ে তা দিয়ে “স্ট্র” এর মত করে পানি পান করুন। এতে নলের ভেতরে থাকা জিনিস গুলো ফিল্টারের মত কাজ করে পানিতে থাকা জীবাণুর পরিমান কমিয়ে দেবে।
১১) মুখে সামান্য পানি নিয়ে হাঁটলে তা আপনাকে ঠান্ডা রাখবে আর আপনাকে পানিও কম খেতে হবে। এ ভাবে চেষ্টা করলে অল্প পানি নিয়েই অনেকটা পথ হাঁটা যায়।
১২) অনকে সময় কঠিন পরিস্থিতিতে খারাপ পানিই একটু অন্য ভাবে শরীরে প্রবেশ করাতে হয় শরীরকে হাইড্রেড রাখার জন্য। সেটি হচ্ছে আপনার পায়ু পথ দিয়ে। এখান দিয়ে খাবার অযোগ্য পানি শরীরে প্রবেশ করানো হয় শরীরকে হাইড্রেড রাখার জন্য। যেহেতু আমাদের দেহের সকল আর্বজনা আমাদের পায়ুপথ দিয়ে বেড় হয়ে যায় তাই অল্প পরিমান খারাপ পানি এখান দিয়ে প্রবেশ করালে তাতে শরীরের ক্ষতি হয় না। তবে মনে রাখতে হবে যে শুধু চরম পরিস্থিতিতেই এটা করা ভালো।
১৩) আপনি পানি হিসাবে আপনার সদ্য ত্যাগ করা “ইউরিন” ব্যবহার করতে পারনে। তবে মনে রাখবেন এতে লবন বেশি পরমিানে থাকে তাই আপনি ডি-হাইড্রেড হয়ে পরতে পারেন। চরম পরিস্থিতিতে পানির বিকল্প হিসাবে “ইউরিন ব্যবহার করা হয়।
১৪) সমুদ্রের পানি নোনা বলে তা পানের যোগ্য নয়। তবে একটু চেষ্টা করলেই তা পান যোগ্য করে তোলা সম্ভব। একটা টিনের পাত্রে নোনা পানি ভরে পাত্রটি ভালো ভাবে বন্ধ করুন। এবার পাত্রে সামান্য একটা ফুটো করে তাতে একটা নল বসিয়ে পাত্রটি আগুনের উপর বসান। যেহেতু মিষ্টি পানি লবন পানির চেয়ে হালকা তাই তা বাষ্পাকারে নলের ভেতর দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় বেড় হয়ে আসবে। এ পদ্ধতিতে একটু সময় বেশি খরচ হলেও পুরস্কার হিসাবে আপনি পাবেন পান যোগ্য মিষ্টি খাবার পানি।
১৫) সামনে নারকেল গাছ পরলে আপনি এর পানি দিয়ে অনায়াসে অনেক দিন টিকে থাকতে পারবেন। আর নারকেলের পানিতে মিনারেল বেশি থাকে যা আপনার শরীরের জন্য উপকারী।
১৬) অনেক সময় ক্যাকটাসের রস পানি হিসাবে পান করা যায়। তবে এ সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। যদি আপনি ক্যাকটাস না চিনে থাকেন তবে তা থেকে দূরে থাকবেন। অনকে সময় ক্যাকটাসের মত দেখতে “ইউফবিয়া” নামক এক ধরনের গাছ জন্মায়। এর সাদা রস খুবই বিষাক্ত। তা পান করলে আপনি মারা যেতে পারেন এমন কি মরা ইউফোবিয়াও আগুনে পোড়ালে তার বিষ ধোয়ার সাথে বাতাসে মিশে আপনার প্রান নিতে পারে।
১৭) শীতের দিনে ঘাসে প্রচুর শিশির দেখা যায়। আপনি পায়ের সাথে একটা কাপড় বা রুমাল বেঁধে তার বেতর দিয়ে হাঁটলে অনায়াসেই কাপড়ে শিশির ধরা পরবে। আপনি কাপড় নিংড়ে এ শিশির সহজেই পান করতে পারেন।
(চলবে)

সার্ভাইভ জানুন-২


বাসস্থানঃ-
বনে-জঙ্গলে সার্ভাইভ অথবা ক্যাম্পিং করার সময় থাকার জায়গাটা আপনাকে খুব ভালো ভাবে নির্বাচন করে নিতে হবে। আপনি এমন একটি স্থান র্নিবাচন করতে পারেন যেখান থেকে খাবার ও পানি বিশেষ করে পানিটা যেন খুব সহজেই পেতে পারেন। জঙ্গলে আদ্রতার পরিমান খুব বেশি থাকে তাই অল্প পরিশ্রমেই আপনি খুব তাড়াতাড়ি ডি-হাইড্রেড হয়ে পরবেন। আপনাকে জঙ্গলে প্রতি ঘন্টায় প্রায় দুই লিটার পানি খেতে হবে নিজেকে হাইড্রেড রাখার জন্য কারন খাবার ছাড়া আমরা ১৪ দিন বাঁচতে পারি কিন্তু পানি ছাড়া আমার ১ সপ্তাহ ও বাঁচবো না। এ কারনেই থাকার জায়গাটা পানির কাছা কাছি হলে ভালো। যাইহোক, যদি আপনার সাথে তাবু থাকে তাহলে থাকাটা খুব একটা সমস্যা হবে না। শুধু এটা দেখবেন আপনার থাকার জায়গাটা যেন জন্তু জানোয়ারের চলার পথে না হয় আর জায়গাটা যেন পরিষ্কার থাকে। তাবুর বদলে আপনার কাছে যদি “হ্যামক” (দোলনার মত এক ধরনের বিছানা) থাকে তবে তা পাশাপাশি ২টা গাছের সাথে বেঁধে ঝুলিয়ে নিন। অনেক হ্যামকের সাথে মশারীও থাকে তাই আপনার যদি এ সুবিধা না থাকে তবে সাথে কীটনাষক নিতে ভুলবেন না। ঘুমানোর আগে শুধু তা হ্যামকের দড়ি গুুলোয় মেখে নিবেন তাহলে পোকা-মাকড় দড়ি বেয়ে আপনার উপর উঠতে পারবে না। তবে আপনি যদি পূর্বে হ্যামকে অভ্য¯ ’ না থাকেন তবে আপনাকে একটু সাবধানে তাতে অভ্যস্থ হতে শিখে নিতে হবে। হ্যামকের সম্পুর্ন ব্যালেন্স টা থাকে চারটি দড়ির উপর তাই আপনি যদি ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পারেন তবে রাত-বিরাতে ঘুমের মাঝে হুমরী খেয়ে আপনাকে মাটিতে আছড়ে পরতে হতে পারে। যদি একান্তই আপনার কাছে তাবু বা হ্যামক কোনটাই না থাকে তবে নানা রকমের টুকিটাকি জিনিস দিয়ে আপনাকেই একটা থাকার মত কুঁড়ে বানিয়ে নিতে হবে একটু বুদ্ধি খাটালেই আপনি নিজেই তা তৈরী করে নিতে পারবেন আর এটা খুবই জরুরী কারন জঙ্গলে রাত কাটানোর সময় মাথার উপরে থাকা একটা ছাদ আর সামনে জ্বলতে থাকা একটু আগুন আপনার মনকে সস্তি দেবে বিশেষ করে যাদের জঙ্গলে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা নেই তাদের জন্যতো অবশ্যই। কঠিন পরিস্থিতিতে সহজ-সরল ভাবে চিন্তা করলে একটা না একটা সমাধান বের করা যায়ই। হাতের সামনে যা পাবেন তা দিয়েই চট জলদি একটা ব্যবস্থা করে নিবেন। নিচে আমি কয়েকটা উদাহারন দিলাম-
উদাহারন-১
প্রথমে ঠিক করুন আপনার কতটুকু জায়গা লাগবে। এখন আপনি ৪/৫ ফুট আকারে সোজা কয়েকটি ডাল কাটুন। ৬টি ডাল দিয়ে ক্যামেরার ট্রাইপডের আকারে ২টি ট্রাইপড তৈরী করুন। এখন ট্রাইপড ২টি পাশাপাশি রাখুন এবং ট্রাইপড ২টির উপর আড়াআড়ি ভাবে আরেকটি সোজা ডাল রাখুন। ব্যাস, আপনার কুঁড়ের কাঠামোটি তৈরী হয়ে গেলো। এখন ছাদ তৈরীর জন্য আপনি যে দিকে মুখ কওে শোবেন তার উল্টো পাশে কাঠামোর মাথা থেকে মাটি পর্যন্ত কৌণিক আকারে এক সারি ডাল পাশাপাশি বসিয়ে দিন ও বৃষ্টি ঠেকানো জন্য পুরো ছাদে পাতা বিছিয়ে দিন কুড়ের মেঝেতেও পাতা ব্যবহার করতে পারেন তোশোক হিসাবে। সব মিলিয়ে আপনি একটি কুঁড়ে তৈরী করে ফেললেন।
উদাহারন-২
৮/১০ ফুট আকারে ২০/৩০ টি সোজা ডাল কেটে আনুন ও সমস্ত ডালগুলোকে একত্র করে ডালগুলোর এক মাথা দড়ি দিয়ে হালকা করে বাঁধুন। এখন ডাল গুলোর দড়ি বাধা দিকটা উপরে রেখে নিচের খোলা ডাল গুলোকে মাটিতে চার দিকে ছরিয়ে দিন এতে কওে আপনি যে কাঠামোটা পেলেন তা অনেকটা মাছ ধরার মোচার আকৃতির। আপনি আপনার সুবিধা মত মোচার ফাঁক গুলোকে কম বেশ করে নিতে পারেন। কাঠামোটিকে আরও শক্ত-পোক্ত করতে চাইলে আপনি দড়ি বা লতা ব্যবহার করে অথবা গাছের নরম ছাল ব্যবহার করে ডালগুলো একটার সাথে আরেকটা বেঁধে দিতে পারেন। এখানেও বৃষ্টি আটকাতে কাঠামোটিকে নানা রকম পাতা দিয়ে ঢেেক দিতে পারেন। তোশোক হিসাবে গাছের শুনো পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
উদাহারন-৩
অনেক সময় জঙ্গল নিজে থেকেই কিছু আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে রাখে। আপনাকে শুধু সেগুলো চিনে নিতে হবে। তাতে আপনার পরিশ্রম অনেকটাই কমে যাবে। হয়তো বা দেখবেন এক সারি গাছ এমন ভাবে একটার উপর আরেকটা জন্মেছে যে গাছ গুলোর নিচে একটা গুহা মত সৃষ্টি হয়েছে। শুধু একটা মুখ আটকে দিন আর ভেতরটা পরিষ্কার কওে নিন। ব্যাস, আপনি একটা থাকার জায়গা পেয়ে গেলেন। তবে একটা কথা, যদি কোন কারনে আপনাকে গাছে রাত কাটাতে হয় তবে নিজেকে গাছের সাথে বেঁধে নিতে ভুলবেন না যেন কারন আপনার নিজের সুরক্ষা সবার আগে।
উদাহারন-৪
আপনি এমন চারটি গাছ বেছে নিন যারা একটি কাল্পনকি র্বগক্ষত্রে তরৈি করছে,ে তাতে দড়ি ও ডাল পালার সাহায্যে মাচা তৈরী করতে পারেন যদি আপনাকে কোন কারনে মাটি থেকে কিছুটা উপরে আশ্রয় নিতে হয়। এটা বানানো খুব একটা কঠিন না। আপনার মাচাটা হবে অনেকটা মই আকৃতির। যদি আপনি একটা মই বানাতে পারেন তবে এটা বানানোও আপনার পক্ষে সহজ হবে। তবে এর সমস্ত শক্তি ধরে রাখবে আপনার দড়ির গিঁট। তাই আপনাকে শক্ত ভাবে মাচা টিকে বাঁধতে হবে।
চলবে

“সার্ভাইভ” জানুন -১

 
সার্ভাইভঃ
“সার্ভাইভ” মানে হচ্ছে টিকে থাকা। এর মানে হচ্ছে মানিয়ে চলা। আপনি যখন যে অবস্থায় আছেন তার সাথে নিজেকে মানিয়ে চলে নিজেকে টিকিয়ে রাখা। জীবনের চলার প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা নানা ভাবে “সার্ভাইভ” করে চলছি কখনও বা জেনে আবার কখনও বা না জেনে। পরিবেশ যেখানে যেমন, আপনি সেখানে তেমন। এর মানে হচেছ আপনার নিজেকে বিশেষ ভাবে গড়েতোলা অন্য সবার থেকে আলাদা ভাবে, যেন সব সময় সকল পরিবেশ আপনার অনুকুলে থাকে,যে কোন খারাপ পরিস্থিতি থেকে আপনি যেন সহজেই বের হয়ে আসতে পারেন। আমাদের মন এবং আমাদের মগজ হচ্ছে সবচাইতে বড় শক্তি। মনে রাখবেন মন আপনাকে লক্ষে পৌছানোর সাহস দিবে আর মগজ আপনাকে তাৎখনিক উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে সেই লক্ষের আরও আছে পৌছে দিবে। যাইহোক “সার্ভাইভ” এর পরিধি ব্যপক হলেও এখন এটির কিছু নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারিত হয়েছে যেখানে এর জ্ঞান এবং কলাকৌশলকে পুর্নাঙ্গ ভাবে ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। আমাদের মধ্যে যারা আর্মিতে আছেন, যারা স্কাউটে আছেন অথবা যারা ক্যাম্পিং করতে পছন্দ করেন “সার্ভাইভাল নলেজ” তাদের জানাটা একান্ত প্রয়োজন। তবে আমি এটা বলছিনাযে এ জ্ঞান অন্য কেউ নিতে পারবেন না। আমাদের সকলেরই এর কিছু না কিছু কাজ সর্ম্পকে সঠিক ধারনা রাখা উচিৎ, এর কারন আমার মতে আমরা যাই শিখিনাকেন জীবনের চলার পথে কোথাও না কোথাও ঐ শিক্ষা আমাদের কাজে আসেই।
তাই আমি আমার সীমিত জ্ঞান নিয়ে সার্ভাইভালের কিছু কলাকৌশল আপনাদের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা করবো।যদি এতে আপনাদের আংশিক উপকারও হয়ে থাকে তবে আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
(চলবে)

সার্ভাইভ জানুন: গোঁড়ার কথা

জঙ্গলে-পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানো, ক্যাম্প করা, ক্যাম্প-ফায়ারের চারিদিকে বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে চুটিয়ে আড্ডা দেয়া ইত্যাদির মধ্যে একটা রোমাঞ্চ কাজ করে। আমরা প্রায় সব বয়সের মানুষ-ই কম বেশি রোমাঞ্চ পছন্দ করি আর তার কারনেই কর্মবেস্তময় সময়ের ফাঁক-ফোঁকরে যদি সামান্যও সময় পাই তাহলে আমরা কোন না কোন রোমাঞ্চের সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে পিছ পা হই না। ছোট বেলা থেকেই জঙ্গল, পাহাড়, ক্যাম্পিং ইত্যাদির প্রতি আমি আকৃষ্ট ছিলাম। বড় হওয়ার পর যেটা প্রায় নেশায় পরিনত হয়েছে। যাইহোক, ক্যাম্পিং এর পেছনে থাকা আমার দূর্বার আকর্ষনের কারনেই একবার আমার একটা বইয়ের প্রয়োজন পরে ক্যাম্পিং সংক্রান্ত কিছু বিষয় জানার জন্য। কিন্তু অনেক লাইব্রেরী ঘুরেও আমি ক্যাম্পিং এর উপরে লিখা বিশদ কোন বই পেলাম না। মনে একটু কষ্ট পেলাম। আমাদের দেশের লেখকরা এ বিষয়টা নিয়ে লিখার আগ্রহ রাখেন না। যেন এ বিষয়টা সম্পর্কে আমাদের না জানা থাকলেও চলবে। ভাবলাম ইন্টারনেটে খোঁজ নিয়ে দেখা যাক। দেখলাম ইন্টারনেটে এ ধরনের বিষয়ের উপর ইংরেজীতে লিখা অসংখ্য ওয়েব-সাইট আছে এবং সাইট গুলোতে ক্যাম্পিং সংক্রান্ত বিশদ তথ্য দেওয়া আছে। তবে হতাসার কারন হলো এ ধরনের বিষয়ের উপর বাংলায় কোন ওয়েব-সাইট পেলাম না আর ব্লগ সাইট গুলোতেও নানা বিষয় নিয়ে প্রচুর লেখা- লেখি হলেও ক্যাম্পিং সংক্রান্ত কোন বিষয় নিয়ে তেমন একটা লেখা- লেখি হয় না। সেই থেকেই চিন্তা করলাম ব্লগে ক্যাম্পিং এর নিয়ম কানুন নিয়ে বিশদ ভাবে সিরিজ আকারে কিছু লিখবো। সিরিজটি নাম ঠিক করলাম “সার্ভাইভ জানুন”। পরবর্তীতে এ নামে একটা ব্লগ বা ওয়েব সাইট তৈরী করার ইচ্ছেও আছে। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে এখানে আমি ক্যাম্পিং সংক্রান্ত কিছু গুরুত্ব পূর্ন তথ্য পেশ করবো যাতে সহজ ভাবে সবাই এ বিষয়টাকে জানতে ও বুঝতে পারেন। এখানে বিশেষ ধরনের কিছু কলা-কৌশল সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হবে যা জানা থাকলে প্রতিকুল অবস্থার মাঝেও নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে। আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা এবং ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত কিছু তথ্যর সমন্ব্যয়ে তৈরী করা “সার্ভাইভ জানুন” সিরিজটি যদি আপনাদের জীবনের চলার পথে কোন না কোন ক্ষেত্রে সামান্যেও উপকারে লাগে তবে তা আমাকে “সার্ভাইভ জানুন” সিরিজটিকে আরেকটু সামনে এগিয়ে নিতে প্রেরণা জোগাবে।
আপনাদের সহায়তা একান্ত কাম্য।
জয়ন্ত ব্রহ্ম